x 
Empty Product

আমে ফরমালিন আর কার্বাইডের ব্যবহার নিয়ে দেশে যখন ব্যাপক হইচই হচ্ছে, এর নেতিবাচক প্রচারের অনেক ভোক্তা সুস্বাদু এই মৌসুমি ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও মাঠে নেমেছেন কম। আমের বাজারে চলছে ব্যাপক মন্দা। এই সময়ে শাহ কৃষি জাদুঘর এবার ফরমালিন-কার্বাইড তো দূরের কথা, কোনো কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই আম উৎপাদনের সক্ষম হয়েছে।
এক হেক্টর আয়তনের এই বাগানে এবার পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ টন আম হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে আম চাষে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর শাহ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিগ্রামে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বেসরকারি পর্যায়ে এটি বাংলাদেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবেশবান্ধব কৃষি আন্দোলন করে আসছেন। এখানে কৃষকদের বিনা মূল্যে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
কয়েক বছর ধরে জাহাঙ্গীর শাহ তাঁর নিজের এক হেক্টর আয়তনের একটি আমবাগানে রাসায়নিকমুক্ত আম ফলানোর চেষ্টা করে আসছেন। এই কাজ করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে তিনি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তিনি আমকে রাসায়নিকমুক্তভাবে উৎপাদন করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা লড়াই চালিয়েছেন। এবার তিনি এই কাজে প্রায় সফল হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর শাহর পদ্ধতিতে আমে সরাসরি কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। পোকা দমনের জন্য কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্সফেরোমন ফাঁদ, বিষটোপ ও অ্যান্টিফিডেন্ট ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন করেছেন। এভাবেই তিনি সফল হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর শাহ জানান, মুকুলের আগে হপার পোকা দমনের জন্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়—এমন কীটনাশক সহনীয় মাত্রায় ব্যবহার করেছেন। গাছে মুকুল আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমে আর কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে আম পরিচর্যা করতে গিয়ে কিছু আমের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করলে হয়তো আমের ফলন আরও বেশি হতো। কিন্তু পরিবেশবান্ধব উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত আম উৎপাদনের জন্য আপাতত তিনি এই ক্ষতি মেনে নিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, ভবিষ্যতে গৃহীত পদ্ধতিকে আরও টেকসই ও কার্যকর করতে পারবেন। তখন আর এ ধরনের ক্ষতি হবে না।
জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেনের আকাফুজি এগ্রো টেকনোলজি নামে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তিনি আম প্রক্রিয়াজাত করে ডিহাইড্রেড ম্যাঙ্গো স্লাইস ও ডাইস তৈরির জন্য কাজ করছেন। তাঁর অধীনে জাপানি গবেষক কেনজি সুজি দুই বছর ধরে গবেষণাসহকারী হিসেবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা আম প্রক্রিয়াজাত করে স্লাইস ও ডাইস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ বছর তাঁরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনে যাচ্ছেন। তাঁরা জাহাঙ্গীর শাহর রাসায়নিকমুক্ত সব আম নিতে চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এম মনজুর হোসেন বলেন, তাঁরা আম প্রক্রিয়াজাতকরণের যে কাজ করছেন, তার জন্য রাসায়নিকমুক্ত আম প্রয়োজন। এ জন্য তাঁরা জাহাঙ্গীর শাহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। একাধিকবার তাঁর বাগান পরিদর্শন করেছেন। জাহাঙ্গীর শাহ তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী আম উৎপাদন করেছেন। এ বছর তাঁদের চাহিদা ছিল প্রায় ৫০ টন, কিন্তু জাহাঙ্গীর শাহ হয়তো ১৫ থেকে ২০ টন দিতে পারবেন।
কয়েক দিন আগে জাহাঙ্গীর শাহর আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে প্রায় ১০০টি সেক্সফেরোমন ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। তার ভেতরে পোকা পড়ে মরে আছে। এ ছাড়া বাগানের ভেতরে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি বিষটোপ রাখা হয়েছে। বাগানের শ্রমিকদের আরও কিছু জৈবপদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যায়। কৃত্রিম কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি বলে আমের মনকাড়া কোনো রং হয়নি। জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, তাঁর আমের আকর্ষণীয় রং হয়নি, কিন্তু খেতে সুস্বাদু এবং নিরাপদ।

আমগাছ খুব বড় হয়। তাই যেকোনো আমগাছ ড্রামে লাগানো যাবে না। ড্রামে লাগানোর জন্য বেছে নিতে হবে এমন সব আমের জাত যেগুলোর গাছ খাটো বা বামন ও ঝোপালো হয় এবং অল্প বয়স থেকেই আম দেয়া শুরম্ন করে। এ দেশে প্রাপ্ত জাতগুলোর মধ্যে আম্রপালি, লতা বোম্বাই, মলিস্নকা, নিলম, দশেরি, চৌষা, কেইট, শ্রাবণী, সিন্দুরী, বাউ আম-৩, বাউ আম-৭, বাউ আম-৯ (চৌফলা) ইত্যাদি জাত ড্রামে লাগাতে পারেন। আম্রপালি জাতের আম খুব মিষ্টি ও বেশ কয়েক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়, গাছে ধরেও প্রচুর। বাউ আম-৯ জাতটি নিয়মিত ফলধারী বামন প্রকৃতির গাছ, এ গাছে বছরে তিন-চারবার আম ধরে। তাই সৌখিন ফলচাষিরা ছাদে ড্রামে বা টবে এ জাতটি চাষ করতে পারেন। বাণিজ্যিকভাবে এটা চাষ না করা ভালো। এ ছাড়া থাইল্যান্ড থেকে আসা ‘নাম ডক মাই’ জাতটিও ড্রামে লাগাতে পারেন। আশপাশের বিশ্বসৱ নার্সারি বা সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারগুলো থেকে এসব জাতের কলম কিনতে পারেন।
 মে-জুন মাসে ড্রামে আমের কলম লাগানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। হাফ ড্রাম হলে ভালো হয়। ড্রামের জন্য সারমাটি তৈরি করতে হবে। টবের জন্য দোঁয়াশ মাটি নেবেন। মাটির সাথে চার ভাগের এক ভাগ বা ১০ কেজি গোবর সার বা ড্রামপ্রতি চার কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সার, ১০০-১৫০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২০০-২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, এক কেজি হাঁড়ের গুঁড়া, ৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার মিশিয়ে নিন। এসব সারমাটি ড্রামে ভরার আগে ড্রাম থেকে যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে সে জন্য ড্রামের তলায় ছিদ্র করে নিন। ছিদ্রের মুখে তিন দিকে পুরনো মাটির টব ভাঙা টুকরো এমনভাবে দিন যাতে ছিদ্রের মুখ বন্ধ না হয়। এর ওপর আর একটা টুকরো দিয়ে ঢেকে পাতলা সৱর করে খড় বিছিয়ে দিন। তারপর সারমাটি দিয়ে ড্রাম ভরে দিন। ড্রামের মাঝখানে সোজা করে জুন-জুলাই মাসে আমের কলম পুঁতে দিন। কলম লাগানোর পর পানি দেবেন। কলম যদি বেশি লম্বা হয় তাহলে মাটিতে লেগে গেলে আগা কেটে কিছুটা খাটো করে দিতে পারেন। এতে পরে গাছ ভালো ঝোপাল হবে।
 জুন-জুলাইতে লাগানো কলমের গাছে জানুয়ারি-ফেব্রম্নয়ারিতে মুকুল আসবে। তবে প্রথম বছর সেসব মুকুল না রেখে সব ভেঙে দেবেন। পরের বছর আসা মুকুল রেখে আম ফলাবেন। প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে ড্রামের মাটিতে গোবর ও অন্যান্য সার দেবেন। বছরে একবার প্রতি ড্রামে চারটি করে ট্যাবলেট সার পুঁতে দিতে পারেন। ট্যাবলেট সার দিলে শুধু গোবর সার দেবেন, অন্য কোনো সার দেয়ার দরকার হবে না। চার-পাঁচ বছর অনৱর গাছের গোড়া থেকে খানিকটা মাটি সরিয়ে কিছু শিকড় ও ডালপালা ছেঁটে দেবেন। বর্ষার আগে এ কাজ করতে হবে। জুন-জুলাইতে যখন আম তুলবেন, দু-তিনটি পাতাসহ বোঁটা কেটে তুলবেন। এতে পরের বছর ভালো আম ধরবে। মুকুল ও গুটি ঝরা কমাতে পস্ন্যানোফিঙ হরমোন মুকুল বের হওয়ার ঠিক আগে ও ঠিক পরে দু’বার স্প্রে করতে পারেন। এ সময় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশকও ছিটাতে পারেন। গুটি মারবেলের মতো হলে সে সময়ও একবার ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ছিটাতে পারেন। এতে আমগাছে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হবে। ড্রাম রাখবেন ছাদে খোলা জায়গায়, যেখানে সারা দিন রোদ পড়ে। ড্রাম ছাদের ওপর এমনভাবে রাখবেন যাতে ছাদ থেকে ড্রাম কিছুটা উঁচু বা ফাঁকা থাকে। এতে ছাদের ৰতি হবে না। এ জন্য ড্রামের তলায় চার পাশে চারটি ইট দিয়ে উঁচু করে দিতে পারেন। ড্রামে ছয়-সাত বছর গাছ রাখার পর সেটা সরিয়ে নতুন গাছ লাগালে ভালো হয়।

শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও খায়রুল মনের অদ্যম ইচ্ছা শক্তি সাহস নিয়ে আমবাগান লিজ নিয়ে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ করে নিজে লাভবান হয়েছেন, পাশাপাশি তার অধীনে ৭০টি পরিবার কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। প্রতিবন্ধী হয়েও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তার প্রমাণ রেখেছেন প্রতিবন্ধী খায়রুল ইসলাম (৪৮)। তবে কয়েকদিনের বন্যায় তার বাগানে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও বর্তমানে তিনি সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকার মালিক। তবে সরকার বা  ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ তিনি পাননি। প্রতিবন্ধি খায়রুল এখন কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

খায়রুল ইসলাম জানান, অভাব অনটনের সংসারে ২০০১ সালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শারিরীক প্রতিবন্ধীতে পরিণত হন খায়রুল। দুঃসময়ে নিজের স্ত্রী সন্তান তাকে একা ফেলে চলে যায়। মানুষ তাকে করুণার চোখে দেখতে থাকে। মনের ক্ষোভ ও জেদের বশে খায়রুল নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করতে থাকে।

২০০৩ সালে ব্যাংকের জমানো এসপিএস-এর ২০ হাজার টাকা ভাঙ্গিয়ে মানুষের সাথে ফলের ব্যবসায় নামেন তিনি। প্রতিবন্ধী এই মানুষটি শুধু মনের জোরেই নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে মানুষের বাগান লিজ নিয়ে তাতে বিভিন্ন প্রজাতির আম আবাদ করে গত ১০/১২ বছরে কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।

প্রতিবন্ধী খায়রুল গড়ে তোলেন বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর পি,এস,পি এগ্রো বাগান। প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ রয়েছে এই বাগানে। খায়রুল ইসলাম ৩ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন এই বাগানটি। পাশাপাশি আরোর ১০টির মত ছোট বড় আম বাগান প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছেন তিনি। এ বছর আম হয়েছে ভাল তাই খরচ বাদ দিয়ে লাভের মুখ দেখবেন তিনি। খায়রুল নিজের বাগান নিজেই পরিচর্চা করেন। ফরমালিন বা বিভিন্ন ঔষধ মিশিয়ে আম না পাকিয়ে বরং তিনি বাগানের আম গাছে পাকানো অবস্থায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারজাত  করেছেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা তার বাগানের আম্রপলি, ল্যাড়া, সূর্যপুরি, গোপালভোগ, মিশ্রিভোগসহ নানা প্রজাতির আম দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন। প্রতি বছরই ১০/১২টি বাগান লিজ নিয়ে তিনি নিজে সহ প্রায় ৭০টি পরিবারের মানুষ এখন সাবলম্বির পথে। এক সময়ের দরিদ্র কৃষক খায়রুল এখন কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

তার পিএইচপি অ্যাগ্রো সুলতানপুর, বোচাগঞ্জ বাগানের ইনচার্জ ফরষ্টে ইঞ্জিনিয়ার মো. মহিদুর রহমান জয়-এর সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রতিবন্ধি খায়রুল অনুপ্রাণিত হয়েই ব্যাপক সাফল্য ও সুনাম অর্জনের পাশাপাশি এখন আর্থিকভাবে সাবলম্বি।

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের এক সময়ের অসহায় কৃষক শারীরিক প্রতিবন্ধি খায়রুল ইসলাম আম বাগান করে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। মানুষের বাগান লীজ নিয়ে নিজেই বিভিন্ন প্রজাতির আম আবাদ করে নিজেও লাভবান হয়েছেন পাশাপাশি তার অধীনে ৭০টি পরিবার কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
 মনের অদ্যম ইচ্ছা শক্তি সাহস থাকলে যে কোন কাজই মানুষের কাছে যে সহজ হতে পারে তার প্রমান রেখেছেন প্রতিবন্ধি খায়রুল ইসলাম (৪৮); অভাব অনটনের সংসারে ২০০১ সালে এক মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় শারিরীক প্রতিবন্ধিতে পরিণত হন খায়রুল।

সে দুঃসময়ে নিজের স্ত্রী সন্তান তাকে একা ফেলে চলে যায়। মানুষ তাকে বিভিন্ন ভাবে তাচ্ছিল ও করুনার চোখে দেখতে থাকে। মনের ক্ষোভে ও জিদে খায়রুল নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্ঠা করতে থাকে।

২০০৩ সালে ব্যাংকের জমানো এসপিএস এর ২০ হাজার টাকা ভাঙ্গিয়ে মানুষের সাথে ফলের ব্যবসায় নামেন তিনি। প্রতিবন্ধি এই মানুষটি শুধুমাত্র মনের জোরেই নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে মানুষের বাগান লীজ নিয়ে তাতে বিভিন্ন প্রজাতির আম আবাদ করে গত ১০/১২ বছরে কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি প্রতিবন্ধি খায়রুলের এই সাফল্যে কথা নিয়ে তার সাথে কথা হয় বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর পি,এস,পি এগ্রো বাগানে। প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ রয়েছে এই বাগানে। খায়রুল ইসলাম ৩ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন এই বাগানটি। পাশাপাশি আরোর ১০টির মত ছোট বড় আম বাগান প্রায় ২কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছেন তিনি।

এবছর আম হয়েছে ভাল তাই খরচ বাদ দিয়ে লাভের মুখ দেখবেন তিনি। খায়রুল নিজের বাগান নিজেই পরিচর্চা করেন। এক বাগান থেকে অন্য বাগান ঘুরি ফিরে নিজের হাতেই পরিচর্চা করতে ভালবাসেন তিনি। বাজারে যখন অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ফরমালিন বা বিভিন্ন ঔষধ মিশিয়ে আম পাকিয়ে বিক্রি করছেন সে সময়ে ঠিক তার উল্টো তিনি বাগানের আম গাছে পাকানো অবস্থায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারজাত করছেন।

যাতে করে করে আম পাকানোর জন্য কোন বিষ প্রয়োগ করতে না পারেন কেউ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা তার বাগানের আম্র‌পলি, ন্যাংড়া, সূর্যপুরি, গোপালভোগ, মিশ্রিভোগ সহ নানা প্রজাতির আম দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন। প্রতি বছরই ১০/১২টি বাগান লিজ নিয়ে তিনি নিজে সহ প্রায় ৭০টি পরিবারের মানুষ এখন সাবলম্বির পথে। এক সময়ের দরিদ্র কৃষক খায়রুল এখন কোটি পতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

ইতিমধ্যে প্রায় ১০/১২ বছরের তার অদম্য শ্রমেই তাকে ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকার মালিক। তবে সরকার বা ব্যাংক থেকে কোন ঋণ তিনি পান নি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

পি,এইচ,পি এগ্রো সুলতানপুর, বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর বাগানের ইনচার্জ ফরেষ্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মহিদুর রহমান জয় এর সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রতিবন্ধি খায়রুল অনুপ্রানিত হয়েই ব্যাপক সাফল্য ও সুনাম অর্জনের পাশাপাশি এখন আর্থিক ভাবেই সাবলম্বি। অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও এখন প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হওয়ার পরও আট দশ জনের মত সাধারন জীবন যাপন করেন তিনি। গাছ বাগান নিয়েই যেন থাকতে ভালবাসেন এই গাছ প্রেমিক মানুষটি।

কিভাবে গাছ পরিচর্চা করতে হবে, কিভাবে ভাল ফলন আসবে আর কিভাবে ফরমালিন বা বিষমুক্ত গাছ পাকা আম মানুষদের কাছে দিতে পারবেন এটাই তার একমাত্র কাজ। তার মতে পরিশ্রমেই মানুষের জন্য যে সাফল্য বয়ে আনে এটা তিনি বিশ্বাস করেন। এছাড়াও মনের জেদ ও ত্যাগ থেকেও মানুষ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে তার প্রমান প্রতিবন্ধি খায়রুল।

খায়রুলের এই সাফল্যে এখন অনেকেই অনুসরন করছে। পীরগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সেক্রেটারী খায়রুল ফরমালিন মুক্ত গাছ পাকা আম বাজারজাত করে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাশাপাশি একজন প্রতিবন্ধি মানুষ হয়েও যে মাত্র ১০/১২ বছরে অদম্য পরিশ্রম করে নিজেও সাবলম্বি হয়েছেন তা অনেকেরই কাছে অনুকরনিয় হয়ে থাকবে।

  •  Start 
  •  Prev 
  •  1 
  •  2 
  •  Next 
  •  End